সুন্দরবন বাঁচবে গাছ কাটা বন্ধ হলে

মোংলা প্রতিনিধি: নিষেধ সত্বেও অসাধু কাঠ ব্যবসায়ী, লোভী বনকর্মী এবং এলাকাবিশেষে বেশ কিছু কেষ্ট-বিষ্টুর স্বার্থ ভোগের পরিণামে সুন্দরবনে বহু দিন ধরেই চলছে অবাধ বৃক্ষচ্ছেদন। এ অঞ্চলে রয়েছে দুর্লভ কিছু গাছ যেমন- ধুধুঁল, পশুর, গরান, হেঁতাল, শাল, সেগুন কেওড়া। নিয়মিতভাবে এই সব গাছ কাটার ফলে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য আজ বিপন্ন।
এ ভাবে চলতে থাকলে অচিরেই হয়তো এটি ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাবে। এই যে বৃক্ষনিধন-পর্ব চলছে, তা নিয়ে প্রশাসনের কোনও উদ্বেগ নেই কেন? নেই কেন কোনও কড়া শাসন ? তারা কি জেগে ঘুমাচ্ছে ? সুন্দরবনের অমূল্য বনসম্পদের এই হাল হওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্যও নষ্ট হচ্ছে। এর ফলও হাতে নাতে মিলছে। দেখা যাচ্ছে, এখানে আছড়ে পড়ছে একের পর এক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়। আবহাওয়ার পরিবর্তনের জেরে জলোচ্ছ্বাস বাড়ছে।
পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ এলাকা সুন্দরবনের নাম সমগ্র বিশ্বের কাছে সুপরিচিত ও আকর্ষণীয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখানকার পরিবেশ পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। সেটা সাধারণ মানুষের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে। সুন্দরবনে একশত গাছ-এর ভিতর পুরানো বড় ধরনের গাছ আছে ৮-১০ টা এবং অবশিষ্ট ছোট গাছ আছে ৯০-৯২টা। সুন্দরবনের ভিতর কিছু কিছু স্থানে দেখা যাচ্ছে একেবারেই কোন রকম গাছ নেই। যাহা সম্পূর্ণ মানুষেরা গাছ কেটে ফাঁকা করে ফেলেছে। আবার বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গাছের ডালপালা পড়ে আছে। কিন্তু ডালপালা ভাঙ্গা গাছের গুড়ি নেই।
এ অবস্থা থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় এটা প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে এমনটা নয়, এর মূলত কারণ সুন্দরবন নিরাপত্তাহীনতায় আছে, যাহার সুফল পাচ্ছে একধরনের বনখেগো মানুষেরা, তবে প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে ও সুন্দরবনের অনেক ক্ষতির প্রভাব দেখা গেছে। এদিকে ফরেস্ট অফিস হতে জেলে বাওয়ালীদের মাছ কাঁকড়া ধরতে বা মধু সংগ্রহের জন্য পাশ পারমিশন দেওয়া হলে ও কাঠ কাটার অনুমতি দেওয়া হয় না।
কিন্তু অনেকে পাশ পারমিট ছাড়া চুরি করে এই কাঠ চোরাপথে জঙ্গল থেকে কেটে নিয়ে আসছে এক ধরনের অসাধু চক্র। এই চক্রগুলি বিশেষ করে ধ্বংস করছে বিরল প্রজাতির বিভিন্ন গাছ। যদিও ওই সমস্ত গাছ কাটা নিষিদ্ধ। আকাশ ছোঁয়া দামের জন্য শাল-সেগুন-গরান-পশুর- কাঠের ব্যবহার আজ সাধারণ মানুষের আয়াত্তের বাইরে। সুন্দরবন এলাকার সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী, রমজাননগর, মুন্সিগঞ্জ, হরিনগর, বুড়িগোয়ালীনী, গাবুরা এবং খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার মহেশ্বরীপুর, ২নং কয়রা মঠবাড়িয়া, বেদকাশি এই সমস্থ এলাকার কিছু অসাধু মানুষ দিয়ে বেশির ভাগই সুন্দরবনের গাছ কর্তন করে থাকে। এ বিষয়ে সচেতন নাগরিকদের অভিযোগ, এই কাজে এক শ্রেণির বনকর্মী, এবং রাজনৈতিক দলের কেষ্ট-বিষ্টুদের প্রত্যক্ষ মদত রয়েছে।
জানা গেছে, সুন্দরবন এলাকার মূল্যবান কাঠ পাচারের বিষয়ে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী দুষ্ট চক্র বরাবরই সক্রিয় রয়েছে। এত বিশাল অরণ্য পাহারা দেওয়ার জন্য যথেষ্ট সংখ্যক বনকর্মীর অভাব রয়েছে। এ দিকে, নির্বিচার অরণ্য ধ্বংসের ফলে বাঘ ও হরিণ সহ অন্যান্য বন প্রানীদের নিরাপদে থাকার জায়গার পরিমাণও কমছে, ফলে অনেক সময় এরা নদী সাঁতরে ঢুকে পড়ে লোকালয়ে। আসুন সুন্দরবনকে নিয়ে ভাবি রক্ষা করি সুন্দরবনকে।
এ বিষয়ে পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীর রেঞ্জের ফরেষ্ট এস,ও সুলতান আহাম্মেদ এর সাথে কথা হলে তিনি বাংলা টাইমসকে বলেন, বর্তমানে সুন্দরবনে কাট পাঁচার ও কাট কাটা এই ধরনের যাবাতীয় কার্যক্রম বন্ধ আছে। আমারা বন বিভাগ খুবি কড়া নজর রেখেছি। সুন্দরবন এলাকায় এখন কেউ কাঠের জ্বালানী দিয়ে রান্না খুবই কম দেখা যায়। অধিকংশ এনজিও সংস্থাগুলো তাদের গ্যাস দিয়ে রান্নার ব্যবস্থা করেছে।