প্রকৃতির খুব কাছ থেকে ঘুরে আসুন চান্দিনার ঘুগরার বিলে

আলিফ মাহমুদ কায়সার, কুমিল্লা:: বর্ষার ভরা মৌসুমে প্রকৃতি ফিরে পায় তার যৌবন, চারদিকে সবুজের সমারোহ, আর ফসলী ক্ষেতে জলে টইটুম্বুর! শহরের একঘেঁয়ামী আর যান্ত্রিক জীবন ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে প্রান ভরে নিঃশ্বাস নিত এবং প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে স্ব-পরিবারে অথবা বন্ধু বান্দব নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন কুমিল্লা শহর থেকে এক ঘন্টা দূরত্বের বিখ্যাত ঘুগরার বিলে।
চান্দিনা উপজেলার ১০নং গল্লাই ও ২ নং বাতাঘাসি ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত, পশ্চিমে চাঁদপুর জেলা কচুয়া উপজেলা পর্যন্ত বিস্তৃত বিলের অবস্থান।
কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ঘোগরাবিলে পর্যটন শিল্প বিকাশে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।ঘোগরাবিলের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য উল্লেখযোগ্য কোনো বিনোদন কেন্দ্র নেই। তবে সম্প্রতি উপজেলার একটি অংশ এ বিলের সৌন্দর্য উপভোগের উপযুক্ত স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে।
উক্ত উপজেলায় কোনো বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় বর্ষাজুড়েই ঘোগরাবিলের এ অংশে থাকে দর্শনার্থীদের ভিড়। আর ঈদ-পূজাসহ বিভিন্ন উৎসবকে ঘিরে লাল মসজিদ পয়েন্টে নজর কাড়ে দর্শকদের উপচে পড়া ভিড়।
দেশের অন্যান্য বিল থেকে এ বিলের পার্থক্য হলো এটি খরস্রোতা।ঘোগরা বিলের নাম অনুসারেই এটির নামকরণ ঘোগরাবিল।চান্দিনা,কচুয়া,দাউদকান্দি উপজেলা জুড়ে এ বিলের বিস্তৃতি।পদ্মা ও মেঘনা নদীর সঙ্গে এ বিলের সখ্য রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে অসংখ্য খাল দিয়ে এ বিলে পানি প্রবেশ করে। এ জলরাশি ঘোগরাবিল হয়ে আবারো নদীতে গিয়ে পতিত হয়। এক সময় ঘোগরাবিল এলাকাটি ছিল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, অবহেলিত।
স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক মো.আলী আশরাফ ঘোগরাবিলের চান্দিনা ও কচুয়া উপজেলা দুটির সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করেন। এ উপজেলার লাল মসজিদ,বড়ইয়া কৃষ্মপুর ঈদগাহ,পুরনো সেতু,দৃষ্টিনন্দন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এ অঞ্চলকে দর্শনীয় স্থানের মর্যাদা দান করেছে।কুমিল্লা জেলার সর্ববৃহৎ এ বিলের প্রাণকেন্দ্র লাল মসজিদকে বলা হয় ঘোগরাবিলের হৃৎপিণ্ড।
এটি চান্দিনা ও কচুয়া উপজেলার প্রায় জিরো পয়েন্টে অবস্থিত। সাচার-রাগদৈল সড়কের ব্রিজ পয়েন্ট থেকে উল্লিখিত স্থানের দূরত্ব মাত্র ৩ কিলোমিটার।চান্দিনার মোহনপুর ও সুরীখোলা থেকে ২ কিলোমিটার মাত্র।ঘোগরাবিলের লাল মসজিদ পয়েন্টে এসে দর্শনার্থীরা বিল দর্শনের পাশাপাশি বিশাল জলরাশি দেখার সুযোগ পান।
এ কারণে বর্ষা ঋতুতে দেশের হাজারো সৌন্দর্যপিপাসু জনতা ভিড় জমান ঘোগরাবিলের লাল মসজিদ পয়েন্টে। বর্ষা মৌসুমে এ বিলের মনোরম পরিবেশ দর্শকদের বেশি আকৃষ্ট করে। এ মৌসুমে ঘোগরাবিলের সুবিশাল জলরাশি, উত্তাল তরঙ্গ, পাল তোলা নৌকা দেখতে উৎসুক জনতা ছুটে আসেন।
কালের গর্ভে বিলীন হতে চলা জলাশ্রয়ী গ্রামীণ জনপদের এক সময়ের জনপ্রিয় জলযান তাল গাছের গুঁড়ি দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি ‘তালের নৌকা’ ঘোগরা বিলের ঐতিহ্যের প্রতীক।
চান্দিনার ঘোগরাবিল শুধু যে বর্ষা মৌসুমে সৌন্দর্য হাতছানি দেয় তা নয়, শুষ্ক মৌসুমে অবারিত সবুজ ফসলের দিগন্ত জোড়া মাঠ বিমোহিত করে। বর্ষায় পলিমাটি জমে সমৃদ্ধ হওয়া জমিতে ইরি ধান চাষ হয়।
যেনো এখানে অন্তত একটা হলেও বর্ষা ও শুকনো মৌসুমের জন্য, ভালো মানের বিনোদন পার্ক হয়
কর্তৃপক্ষের দৃস্টিআকর্ষনের জন্য অনুরুধ জানান দর্শনার্থী আক্তারুজ্জামান খান।
এ সময় ঘুরতে আসা স্থানীয় দর্শনার্থী ইউসুফ জানান, বর্ষার শেষ মুহুর্তে শীতের আগমনীতে নানা প্রজাতির দেশি ও অতিথি পাখির কলতান শোনা যায়। প্রকৃতির লীলাভূমি নয়নাভিরাম চান্দিনার লাল মসজিদ পয়েন্ট এ বিলের প্রাকৃতিক রূপ লাবণ্য আরো নয়নাভিরাম, মনোহর হতে পারে সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়।
এ সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স্নেহাশীস দাস জানান ঘুরগার বিলে ঘুরে দেখা যায়, বিস্তৃত প্রান্তরজুড়ে পানি আর পানি। শতাধিক মানুষ নৌকায় ঘুরে বেড়ায়। আমরা পরিকল্পনা করছি কীভাবে এখানে একটি পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা যায়।